প্রয়ােজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক | proyojon abiskarer jonok vab somprosarn | প্রয়ােজনীয়তাই উদ্ভাবনের জননী
বাংলা ২য় পত্র
ভাব-সম্প্রসারণ
প্রয়ােজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক ভাবস | proyojon abiskarer jonok vab somprosarn | প্রয়ােজনীয়তাই উদ্ভাবনের জননী
প্রয়ােজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক
মূলভাব : প্রয়ােজনই মানুষকে সৃষ্টির প্রেরণা যােগায়। প্রয়ােজনের প্রেক্ষাপটেই অর্জিত হয়েছে সমাজ সভ্যতার ক্রম-অগ্রগতি।
সম্প্রসারিত-ভাব : অভাব মােচন বা প্রয়ােজন মেটানাের জন্য মানুষের যে নিরন্তর প্রচেষ্টা তারই ফলে উদ্ভাসিত হয়েছে নিত্য নতুন জিনিস । এ কথা সত্য যে, "Want leads to the invention of new things.' বর্তমানে মানুষ তার সমৃদ্ধ সভ্যতার জন্য গর্বিত । সে আবিষ্কার করেছে অনেক শক্তিশালী ও অত্যাশ্চর্য জিনিস । সময়ের প্রয়ােজনেই নিত্য-নতুন উদ্ভাবনে মানুষ আজ ব্যস্ত নিমগ্ন । আদিম যুগে মানুষের চাহিদা ছিল সীমিত । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নানা অভাববােধ দ্বারা তাড়িত হচ্ছে ।
এসব অভাব মোচনের জন্য মানুষ উদ্ভাবন করছে আধুনিক জীবনঘনিষ্ঠ নানা প্রয়ােজনীয় জিনিস। কোনাে মানুষ যখন অভাবে নিপতিত হয় বা কোনাে কিছুর অভাব অনুভব করে তখন সে তার অভাব মােচনের জন্য কোনাে না কোনাে পন্থা অবলম্বন করে প্রয়ােজন না থাকলে মানুষের ভাবনা বা চাহিদা থাকে না—বিনা প্রয়ােজনে তখন সে কোনাে কিছু করারও প্রেরণা পায় না । প্রয়ােজনই সমস্যা সমাধানের পথে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় । বস্তুত 'Necessity is a good teacher to solve our problems. It has always taught man to findout new ways and means.' প্রয়ােজনই সব সময় নতুন পথ ও উপায় বের করার শিক্ষা দেয়। প্রয়ােজনই মানুষকে নানা উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের পথ সৃষ্টি করে দিয়েছে । মানুষ তার জীবনকে সুখী, আরামপ্রদ ও নিরাপদ করার জন্য নানা উদ্ভাবন দ্বারা সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রয়ােজনীয়তা মানুষের নিত্য-নতুন কর্মপ্রেরণা ও উদ্ভাবনা চিন্তার উৎস-বিন্দু সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, মানুষের জীবনের নানা প্রয়ােজন থেকেই নানা সামগ্রী উদ্ভাবিত হয়েছে। অর্থাৎ সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের নিত্য-নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের পশ্চাৎপটে মূল প্রেরণা যুগিয়েছে প্রয়ােজনীয়তা প্রয়ােজনেই আদিম মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছে । কারণ তখন তার বিশেষ প্রয়ােজন ছিল আগুন জ্বালানাের । অতঃপর সে বন্য পশু, ঝড়-ঝঞা ও বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেছে ।
অতঃপর সে বন্য পশুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বর্শা তৈরি করতে শিখেছে, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গৃহ নির্মাণ করতে শিখেছে । ঘাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য শিখেছে চাষাবাদ, পশুপালন ইত্যাদি । এভাবে প্রয়ােজনের কারণেই মানুষ জীবন বিকাশের ধারায় স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে আলােকিত ঐশ্বর্যশালী সভ্যতাকে । আধুনিক জগতের মানুষ আজ জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য উদ্ভাবন করেছে নানা চমকপ্রদ, বিস্ময়কর জিনিস ও বস্তুসামগ্রী । চাষাবাদের জন্য মানুষ।
আজ আবিষ্কার করেছে কলের লাঙ্গল, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সুরম্য অট্টালিকা। যােগাযােগের জন্য তৈরি করেছে লঞ্চ, স্টিমার, রেলগাড়ি, মোটর গাড়ি, উড়ােজাহাজ । রােগ নিরাময়ের জন্য উদ্ভাবন করেছে নানা ঔষধ ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। মহাকাশে পাড়ি দেয়ার জন্য উদ্ভাবিত হয়েছে রকেট। গৃহস্থালি ও বিনােদনের প্রয়ােজনে মানুষ উদ্ভাবন করেছে ফ্রিজ, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি। আধুনিক সভ্যতার আর এক মহা বিস্ময় কম্পিউটার। বিশ্বব্যাপী যে বিশাল কর্মকাণ্ডে মানুষ আজ সর্বক্ষণ নিয়ােজিত তা কেবল প্রয়ােজন সাধনের জন্যই নিবেদিত ।
জীবনকে কীভাবে অভাব মুক্ত করা যাবে সেই প্রচেষ্টায় মানুষ আজ ব্যস্ত। আমরা সেই তৃষ্ণার্ত কাকের কথা জানি—একমাত্র প্রয়ােজনই তাকে কলসি থেকে পানি পানের নতুন পথ আবিষ্কার করার উপায় শিক্ষা front i 'Had there been no necessity there would have been no invention at all.
মন্তব্য : প্রয়ােজন ছাড়া মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। সভ্যতার যা কিছু অবদান তার মূল প্রেরণা মানুষের অভাববােধ ও চাহিদা। মানুষের প্রয়ােজন ও চাহিদা যেমন অন্তহীন তেমনি উদ্ভাবনী প্রচেষ্টাও নিরন্তর । প্রয়ােজনের ধারাবাহিকতায়ই মানুষের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
Comments
Post a Comment
Do not share any link.