সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে |sokoler tore sokole amra protteke amra porer tore

বাংলা ২য় পত্র 

ভাব-সম্প্রসারণ

সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে |sokoler tore sokole amra protteke amra porer tore


সকলের তরে সকলে আমরা

প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।


মূলভাব : মানুষের পারস্পরিক সাহায্য ও সহানুভূতির মধ্য দিয়েই মানবকল্যাণ সূচিত হয় । স্বার্থান্ধতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা মানবতার পরিপন্থী।


সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে এটাই মানবতার দাবি । পারস্পরিক সহৃদয় সহযােগিতার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন সুষম বিকাশের সুযােগ লাভ করে, সমাজে কল্যাণের শুভ চেতনা পল্লবিত হয়ে উঠে। স্বার্থান্ধতা ও আত্মসুখের বিভােরতায় মনুষ্যত্বের অপমান হয়, জীবন পদে পদে বিপত্তির শিকার হয় ও সমাজপ্রগতি থমকে দাঁড়ায় । অপর দিকে নিঃস্বার্থ সহযােগিতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মানুষ মনুষ্যত্বের লালনে আত্মসুখ লাভ করার পাশাপাশি অন্যের জীবনে সুখের পরশ এনে দেয়। স্বার্থপর মানুষ জীবন সাধনায় নিজে যেমন ব্যর্থ তেমনি অন্যের জীবনেও সার্থকতা এনে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনাে ভূমিকা পালন করতে পারে না। সেজন্যই কবিকণ্ঠে ঘােষিত হয়েছে-

“আত্ম-সুখ অন্বেষণে আনন্দ নাহিরে,

বারে বারে আসে অবসাদ, পরার্থে যে করে

তিতি নীরে, সেই লভে স্বর্গের প্রসাদ ।"



সৃষ্টির আদিতে এ পৃথিবীতে সামগ্রিক পরিবেশ ছিল ভয়ংকর । গুহাবাসী ও অরণ্যচারী মানুষকে বৈরী প্রকৃতি ও হিংস্র জন্তু-জানােয়ারের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে । বিপন্ন মানুষ অদৃশ্য স্রষ্টার কাছে সাহায্য চেয়েছে কিন্তু কোনাে দৈবশক্তি এসে তার পাশে দাঁড়ায় নি । বরং বিপন্নকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছে অন্য মানুষেরাই । মানুষ সেদিন বুঝতে শিখেছে, মানুষের বন্ধু মানুষই, মানুষের সাহায্যে সহায়ক শক্তি কেবলই মানুষ । তারপর তারা যূথবদ্ধ হয়ে জীবন যাপন করতে গিয়ে গড়ে তুলেছে সমাজ । এভাবেই মানুষ সুপ্রাচীনকালে সার্বিক সহযােগিতা ও নির্ভরশীলতার চেতনা জাগিয়ে তুলেছে । অন্যের জীবনকে সার্থক, সুন্দর ও নিরাপদ করার জন্যে নিজের স্বার্থত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়েছে, আবার অন্যের নিকট থেকেও সহযােগিতা কামনা করতে শিখেছে।



ফলে সমাজের প্রতিটি মানুষ প্রত্যেকের জন্যে, সকল মানুষ সকলের জন্যে নিবেদিত। এ আত্মনিবেদনের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের লালন ও কল্যাণের চেতনা বিকশিত হয়েছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সামাজিক জীবনে মানুষের মধ্যে বাসা বেঁধেছে আত্মস্বার্থের কালাে সাপ । অন্যদের জন্যে নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে তারা প্রস্তুত নয় । সকলে মিলে জীবন বিকাশের আনন্দ ও সুবিধা সম্পর্কেও মানুষ সচেতনতা হারিয়ে ফেলেছে । এর ফলে মানব সমাজে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব ও সংঘাত মানবতাকে জিম্মি করে ফেলেছে। এ স্বার্থজর্জর সমাজকে সুখময় করে তােলার জন্য আমাদের মনে সহানুভূতি ও সহযােগিতার কল্যাণ-চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে ।



মন্তব্য : স্বার্থান্ধতায় সুখ নেই, স্বার্থত্যাগেই জীবনের সার্থকতা । আমাদের হৃদয়ের সংকীর্ণ স্বার্থপরতাকে ত্যাগ করার জন্য মানবতার চেতনাকে প্রেরণাশক্তি রূপে গ্রহণ করতে হবে ।


Comments

Popular posts from this blog

যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন | jekhane dekhibe chai uraiya dekho tai paileo paite paro omullo roton

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই | kirtimaner mrittu nei | kirti maner mrittu nei