কীর্তিমানের মৃত্যু নেই | kirtimaner mrittu nei | kirti maner mrittu nei

বাংলা ২য় পত্র 

ভাব-সম্প্রসারণ


কীর্তিমানের মৃত্যু নেই | kirtimaner mrittu nei | kirti maner mrittu nei


কীর্তিমানের মৃত্যু নেই 


মূলভাব : মানুষ মরণশীল। মহৎ কর্ম সাধনের মাধ্যমে সীমিত সময়ের জীবন নিয়েও মানুষ পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকতে পারে।

সম্প্রসারিত-ভাব : মহাকালের তুলনায় মানুষের পার্থিব জীবন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী । বেঁচে থাকার প্রবল আকাক্ষা সত্ত্বেও একদিন মানুষের পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। স্বল্পস্থায়ী জীবনে কেউ কেউ মহৎ কর্ম সাধনার মাধ্যমে জগতে অমর হয়ে থাকে। রেখে যাওয়া কর্মের মাধ্যমে যারা জগতে অমরত্ব লাভ করেন তারাই কীর্তিমান। মহৎ-কর্মহীন সাধারণ মানুষের পার্থিব জীবনের পরিসমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তার নামও হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে ।


পক্ষান্তরে কীর্তিমানরা তাদের মহৎ আদর্শ ও কর্ম দ্বারা যে গৌরব গাঁথা রচনা করেন তা তাদেরকে তাজমহলের মতাে সমুজ্জ্বল রাখে চিরকাল । তারা তাদের ত্যাগ-তিতীক্ষা, সত্য-নিষ্ঠা, কর্ম-সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ লাভ করেন অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা । কর্মযােগী মহৎ মানুষের মৃত্যু হয় ঠিকই কিন্তু তাদের কর্ম ও প্রতিভার কখনও মৃত্যু হয় না। কারণ তারা মহৎ কর্মের অধিকারী । মহৎ কর্মের মধ্যেই একজন মানুষ পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকে ।


পৃথিবীতে স্বার্থপর মানুষের পাশাপাশি এমন কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যারা তাদের জীবন সীমায় অনেক বড় বড় কাজ সমাধা করে যান । মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.), যিশুখ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মানব মুক্তির ক্ষেত্রে সত্যের সন্ধান দিয়েছেন। এছাড়াও পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান, বিদ্যা, শিক্ষা, আবিষ্কার প্রভৃতির দ্বারা মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করেছেন। মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণকর অবদানই মানুষকে পৃথিবীর বুকে স্মরণীয় করে রাখে ।


পৃথিবীতে কারাে মৃত্যুর পর যদি কেউ তাকে স্মরণ না করে বা তার অভাব বােধ না করে তবে তার জীবন অর্থহীন। তাই প্রতিটি মানুষের জীবনের লক্ষ্য বা ব্রত হওয়া উচিত নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানবতার কল্যাণে মহৎ কর্মের মাধ্যমে জীবনকে পরিপূর্ণ করে তােলা। একথা অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীর বুকে মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি হলাে তার কর্ম । যার কর্ম মানবকল্যাণে উৎসর্গিত হয়েছে মৃত্যুর পরেও পৃথিবীর বুকে তিনি অমরত্ব লাভ করেন তার কর্মের গুণে ।

যার জীবন ও কর্ম আত্মস্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, মৃত্যুর পর কেউ তাকে স্মরণ করে না। কারণ তিনি স্বার্থপরের মতাে নিজেই নিজের জীবনকে ভােগ করে গেছেন—পৃথিবীর মানুষের জন্য কল্যাণকর কোনাে মহৎ কর্মের দৃষ্টান্ত রেখে যান নি। তাই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্বার্থমগ্ন মহৎ কর্মহীন মানুষের নাম পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যায়। মনে রাখা উচিত যে, একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই মানুষ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয় । আত্মস্বার্থে জীবননির্বাহ করা উচিত নয়। কারণ সমাজ ও মানুষের প্রতি রয়েছে আমাদের অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই দায়িত্ব পালনে যিনি সার্থক তিনিই জগতে কীর্তিমান । 'His name will be remembered for all ages to

come."


মন্তব্য : কীর্তি মানুষের মহৎ কর্মের সঞ্চয় । পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই অসংখ্য মানুষ আসছে আর যাচ্ছে কিন্তু কোনাে মানুষই অমরণশীল নয় । কিন্তু 'The memory of noble deeds last long after one dies'.





Comments

Popular posts from this blog

যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন | jekhane dekhibe chai uraiya dekho tai paileo paite paro omullo roton

সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে |sokoler tore sokole amra protteke amra porer tore