কাক কোকিলের একই বর্ণ, স্বরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন | kak kokoler akoi borno sore kintu vinno
বাংলা ২য় পত্র
ভাব-সপম্প্রাসরণ
কাক কোকিলের একই বর্ণ, স্বরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন | kak kokoler akoi borno sore kintu vinno
কাক কোকিলের একই বর্ণ।
স্বরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন।
মূলভাব : বিশ্বচরাচরে মানুষ একই জগৎ পিতার সন্তান হলেও কর্মগুণে মানুষে মানুষে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষের বিচিত্র কর্মভারে বিশ্বচরাচর মুখরিত ও চঞ্চল । সৃষ্টিজগতে শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে মানুষের অবস্থান । শারীরিক বৈশিষ্ট্যে পৃথিবীর সকল মানুষ দেখতে একই রকম হলেও স্বভাবে এবং কর্মগুণে পরস্পরের মধ্যে ভিন্নতা পরিদৃষ্ট হয় । বাহ্যিক অবয়বদৃষ্টে মানুষের প্রকৃত পরিচয় কখনােই অবহিত হওয়া যায় না মানুষের প্রকৃত পরিচয় পরিস্ফুট হয় তার স্বভাব-চরিত্র ও কর্মে । পক্ষীকুলের মধ্যে কাক ও কোকিল আকৃতি ও বর্ণে প্রায় একই রকম—পার্থক্য কেবল কণ্ঠস্বরে ।
একজনের রয়েছে সুমিষ্ট গানের গলা অন্যজন কর্কশ কণ্ঠের অধিকারী। কোকিল নিজের বাসা নিজে তৈরি করতে অক্ষম। তাই সে প্রজননকালে বাচ্চা ফুটানাের জন্য কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। কাক নিজের ডিম ও কোকিলের ডিমের পার্থক্য অনুধাবন করতে না পেরে নিজের ডিমের সঙ্গে কোকিলের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় । কাকের বাসায় কোকিলের বাচ্চা বড় হতে থাকে।
কাক এবং কোকিলের বাচ্চা দেখতে একই রূপ বিধায় কাক তার নিজের বাচ্চা মনে করে যত্নে ও আদরে কোকিলের বাচ্চাকে প্রতিপালন করতে থাকে । বয়ঃবৃদ্ধির এক পর্যায়ে কোকিলের বাচ্চা তার আপন স্বভাবে কণ্ঠস্বর ফোটালে কাক তখন কোকিলের বাচ্চাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং নিজের বাসা থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে কোকিলের স্বভাবগত স্বরই তাকে পরিচিত করে দেয় যে, সে আসলে কাক নয়—কোকিল । তদ্রুপ আকৃতি ও অবয়বে সকল মানুষ একই রকম হলেও মানুষে মানুষে মৌল পার্থক্য তার স্বভাব-চরিত্রে।
সমাজে এমন অনেক লােকই আছে বাহ্যিক দিক থেকে তাদেরকে দেখে সাধু মনে হলেও ভেতরে ভেতরে তারা কপট চরিত্রের অধিকারী । কাক ও কোকিল দৈহিক গঠনে এক হলেও কণ্ঠস্বরের দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি দৈহিক বৈশিষ্ট্যে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য থাকলেও চরিত্রগত দিক থেকে মানুষে মানুষে পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ একজন মানুষের চরিত্র- বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অন্য একজনের চরিত্র বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য দূরনিরীক্ষ্য নয়। মানুষরূপে যারা মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় তখন মানুষ স্বভাব-ছদ্মবেশী মানুষকে সনাক্ত করতে পেরে তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে ।
মন্তব্য : বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে মানুষ পরস্পর অভিন্ন হলেও চরিত্রগুণে মানুষে মানুষে ভিন্নতা রয়েছে । সৎ এবং অসৎ এ দু'ধরনের মানুষ নিয়েই সমাজচক্র চলমান। স্বভাব-আচরণ দেখেই উদঘাটন করতে হবে মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
Comments
Post a Comment
Do not share any link.